এই কাহিনী আদি মহাকাব্য রামায়ণ থেকে গৃহীত। এই পটচিত্রে রাম দ্বারা রাবণ বধ দেখানো হয়। ভারতজুড়ে রামায়ণের নানান অভিযোজন রয়েছে। যেরকম এই রাবণ-বধ কাহিনীরই নানান বৈকল্পিক সংস্করণ বর্তমান। পটচিত্রে বিধৃত কাহিনী অনুসারে, হনুমান এক ব্রাহ্মণের বেশে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীকে ছলনা করে একটি বিশেষ তীর জোগাড় করেন মন্দোদরীর থেকে এবং সেই তীর রামচন্দ্রক এনে দেন। সেই শর নিক্ষেপ করে রাম রাবণকে হত্যা করেন। রাবণ রামায়ণের খলনায়ক বা অ্যাণ্টি-হিরো (বিরোধী-নায়ক)। তাঁর চরিত্র বহুস্তরীয়। রামায়ণের এই অংশ পিংলার পটূয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়।
শ্রীরাম বলিছে শোন মিত্র বিভীষণ
মরিয়া না মরে দেখ লঙ্কার রাবণ
যতবার কাটে মাথা তত জোড়া হয়
এ বড় বিষম বৈরী দেখে লাগে ভয়
নিশ্চয় জানিনু রাম সে মরিবে রাবণ
সীতারে উদ্ধার মিত্র না হল এখন
হনুমান বলে আজি ভাবো রঘুমণি
আমি গিয়া মৃত্যবাণে আনিব এখনি
ব্রাহ্মণের বেশে হনু করিল গমন
বটবৃক্ষ তলা হত বেরালো ব্রাহ্মণ
বক্ষস্থলে পাঁজি পুঁথি বাম হাতে বাড়ি
মন্দোদরিনী কোটেতে যান গুড়িগুড়ি
ব্রাহ্মণে দেখিয়া রাণী অতি কুতূহলে
ব্রাহ্মণে দেখিয়া রাণী অতি যত্ন করে
রাণী দিলো সিংহাসন গো তাতে না বসিলো
কক্ষে ছিলো কুশাসন যে বিছায়ে বসিলো
রাণীকে বলে হই মাতা রাজহিতৈষী পণ্ডিত
আমি চিরকাল চিন্তা করি রাবণের হিত
যে ধন আছে গো রাণী তোমা নিজ ঘরে
বলে দিতে পারি রাণী গণি খড়ি বেঁধে
তোমাকে বলবো না বাপু বলিবো আর কারে
সেই বাণ রেখে আছিস স্তম্ভর ভিতরে
সাবধানে রেখো রাণী দারুণ বৈরী
ঘরে বিধি বিভীষণ গো আছে তো বৈরী
রাণীর মুখেতে শুনে সেই বাণের সন্ধান
নিজ মুর্তি ধরিলেন বীর হনুমান
লাথি মেরে স্তম্ভ ভাঙে দৃষ্টি হলো বাণ
বাণ লয়ে লাফ দিলো গো বীর হনুমান
এক লাফে উঠে গেল সে প্রাচীর উপরে
তার পর লাফে গেলো শ্রীরাম গোচরে
রঘুনাথে বাণ দিয়া সে করিলো প্রণাম
ধন্য ধন্য বীর ত্বেজে ধন্য হনুমান
যতদিন থাকবে হনু তুমি অবনী ভিতরে
আমার সমান দয়া থাকবে তোমার উপরে
রাম রাবণের যুদ্ধ এবার বাধে লঙ্কা পুরে
এক বাণ ছেড়ে রাম গো শত বাণ জোড়ে
দুইজনেতে বাণ মারে বাণ কর্ণরেখা
আবার দুইজন বাণ মারে যার যেমন শিক্ষা
মন্ত্রপাঠ করে যখন ছাড়েন বীর
রাবণের যে বুকে বিঁধে হলো দুই চিড়
ছটফট করে রাবণ সে পরে ভূমি তলে
ব্রহ্মা আদি দেবগণ গগনমণ্ডলে
এক লক্ষ পুত্র যার গো সওয়া লক্ষ নাতি
এক জন না রহিল বংশে দিতে বাতি
রাবণে ঘিরিয়া কাঁদে চৌদ্দ হাজার নারী
কারে দিয়ে গেলে রাজা সোনার লঙ্কাপুরী
রাবণের চিতার ধুঁয়া উড়লো যতক্ষণে
দশমুখে অগ্নি দিয়া পোড়ায় বিভীষণে
এইখানেতে শেষ করিলাম আরো অনেক বাকি
আরো কিছু লিখবো বাবু বেঁচে যদি থাকি
এইখানেতে শেষ করিলাম কবিতার বন্দনা
গাহকের নাম বিজয় চিত্রকর চণ্ডীপুর ঠিকানা