‘পট’ শব্দের উৎস সংস্কৃত ‘পট্ট’, অর্থাৎ, কাপড়। ‘চিত্র’ অর্থে আঁকা। পটচিত্র নামক এই শিল্প মাধ্যমে, লম্বা স্ক্রোল অর্থাৎ জড়ানো পটে কোনো কাহিনী পর্যায়ক্রমে আঁকা হয়। পটচিত্র যারা আঁকেন তাঁদের বলা হয় পটুয়া। এই পটুয়ারা ধীরে ধীরে এই আঁকা পট লাটাইয়ের মত খুলতে থাকেন এবং কাহিনীর নির্দিষ্ট অংশগুলি পর্যায়ক্রমে গানের মাধ্যমে কাহিনী হিসেবে নিবেদন করেন। এই গানগুলিকে বলা হয় ‘পটের গান’। ছবিগুলির বৈশিষ্ট হল এই যে সেগুলি গাঢ় রঙ, দাগ ও বলিষ্ঠ টানের মাধ্যমে আঁকা হয়ে থাকে। আরেকটি বিস্ময়কর ব্যপার হল, এই ছবিগুলি রঙ করা হয় সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে। রঙগুলি সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় ফুল, ফল, পাতা, বীজ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে। পটুয়ারা নানা বিষয়কে ভিত্তি করে ছবি আঁকে। তার মধ্যে রয়েছে পৌরাণিক গাথা (রামায়ণ, মহাভারত ও মঙ্গলকাব্য থেকে সংগৃহীত), রয়েছে ঐতিহাসিক এবং সমসাময়িক ঘটনাবলি (যেমন, মনীষীদের জীবনী, পারমাণবিক যুদ্ধ ইত্যাদি), এবং, এমনকি নারীদের ক্ষমতায়ন শিশুদের অধিকার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক বিষয়বস্তুও পটচিত্রে জায়গা পেয়েছে।
The spectrum of natural colors and their sources is amazing. Saffron is created from Geru Pathar stone, yellow ochre from Holud Pathar stone, white from Khorimati clay, black from a type of soot called Bhushokali. Orange comes from Kamala Pathar stone, green from Simpata leaves, purple from Pui Metuli leaves, pink from banyan buds or Boter Kuri, red from Phanimansha flowers, blue from Dela Nil clay, and yellow from Palash flowers!
Most of the scrolls start with representation of the Jagannath trinity, Brahma and other Hindu divinities.The Patuas paint stories ranging from the origin of the Santhals to the likes of Madanmohan Leela, Krishna Leela and Raas Leela, which reflect the influence of Hindu neighbours and intermingling. The Jadu Pata depicts the story of creation of the universe and the origin of the Santhals.The Yama Pala Pata depicts the Santhali perceptions of hell. Another popular theme is that of the tiger god or Baghut Bonga.
Similar to other patuas, the artists of this village use black colour for the outline. As a result, the drawings on the base become more visible. Simplicity is the trademark of these pats. The pats are also marked by minimal background decoration and usage of colour. After drawing the main pat with thin black border, it is filled with colours.
The Patachitra tradition practised in Purulia is known for its simplistic style and compositions, minimalistic background decorationand distinctivethemes, which are strikingly different from the scroll paintings of Medinipur, Bankura, Murshidabad. Purulia’s Patachitra are essentially a ritualistic practice associated with events in the daily lives of people.
জড়ানো পটে ছবি এঁকে ছবি ও গানের মাধ্যমে গল্প বলা – এইটিই বাংলার পটচিত্রের বৈশিষ্ট। একটিই জড়ানো পটে একাধিক অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশ বা ফ্রেমে আঁকা হয় একটি কাহিনী। পটের ক্ষেত্র বা ক্যানভাস বিভিন্ন আয়তনের হতে পারে। চওড়ায় তা হতে পারে এক থেকে দেড় ফুট, লম্বায় তা হতে পারে তিন থেকে পঁচিশ ফুট অবধি। এই আয়তন নির্ভর করছে পটে বর্ণিত কাহিনীর ওপর। ছবিগুলি সাধারণত উল্লম্ব (ভার্টিকাল) ভাবে আঁকা হয় এবং একটি পটে দশ থেকে পনেরটি ফ্রেম থাকে। আবার আরেক ধরণের পটচিত্রে ছবিগুলি আঁকা হয় আনুভূমিক (হরাইজণ্টাল) ভাবে। সেই ক্ষেত্রে এক একটি লাইনে তিন থেকে ছয়টি ফ্রেম সচরাচর থেকে থাকে। তবে, পটুয়ারা অনেক ক্ষেত্রে একক ফ্রেমের ভিত্তিতে চৌকো আকারের পটেও ছবি আঁকা হয়। সেই ধরণের পটে কোনো দেবদেবী অথবা এককভাবে কোনো পৌরাণিক বা সামাজিক ঘটনা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
বাংলার পটচিত্র অন্যান্য ঐতিহ্যগত অঙ্কণশৈলী ভিত্তিক শিল্পের থেকে অন্যরকম। এই ভিন্নতার মৌলিক উৎস পটের গান। পটুয়ারা স্বয়ং এই গানগুলি বাঁধেন নির্দিষ্ট পট আঁকা হওয়ার আগেই। সনাতন এবং আধুনিক সুর ও শব্দ দুইই ব্যবহার করা হয় গানে। জড়ানো পটে আঁকা কাহিনী যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে এই গানগুলির মাধ্যমে। সাধারণত, গানগুলির তিনটি পর্যায় হয় – ১) কাহিনী, যেখানে গল্পটি বলা হচ্ছে; ২) মাহাত্ম্য – অর্থাৎ মহিমা বিবরণ; এবং, ৩) ভনিতা – যেখানে আত্মপরিচয় জ্ঞাপন করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে, পটের গান প্রভাবিত হত বাউল, কীর্তন, ঝুমুর, যাত্রাপালা ইত্যাদি বিভিন্ন আঙ্গিকের লোকগান থেকে। এখন, পুরোনো ধরণের পটের গানই গাওয়া হয়। প্রায় ৬০টি পটের গান ডকুমেন্টেশন করা হয়েছে।
কাগজের উপর কাপড় সেঁটে জড়ানো পটের জমি বা ক্যানভাস তৈরি হয়। শাড়ি, কাপড় বা কাগজ দিয়ে পটের কাঠামোটি বানানো হয়। মূলতঃ কাগজের উপরেই ছবিগুলি আঁকা হয়। তবে, পটের এই ক্যানভাসটিকে পোক্ত করতে সেই কাগজের পিছন দিকে অর্থাৎ কাগজের যেই পিঠে ছবিগুলি আঁকা হচ্ছে তার উলটো পিঠে কাপড় সেঁটে দেওয়া হয়। এর ফলে পটগুলি মজবুত এবং দীর্ঘদিন টিঁকে থাকার উপযোগী হয়ে ওঠে।
ধর্ম, পুরাণ, রামাযান-মহাভারতের মহাকাব্য, কৃষ্ণলীলা, মঙ্গলকাব্য, লৌকিক দেবদেবীর মাহাত্ম্য একই সঙ্গে তা আবার সমসাময়িক। নীতিকথা, সামাজিক অসঙ্গতি থেকে শুরু করে নারীর ক্ষমতায়ন, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বাঘাযতীনের জীবনী, ৯/১১, ওয়াশিংটন মলের ইতহাস সবকিছুই পটের বিষয় হয়। আবার প্রকৃতি, পরিবেশ, বাল্যবিবাহ, বধূ নির্যাতনের মত সামাজিক সমস্যাও পটের বিষয়।
ভারতের লোকআঙ্গিকগুলির মধ্যে পটচিত্র সবচেয়ে বৈচিত্রময় আঙ্গিক। এতে একইসঙ্গে মিশেছে গান, ছবি, চলচ্ছিত্র। আবার পটে আমরা এনিমেশন ও গ্রাফিক নভেলের অনেক বৈশিষ্ট্যও খুঁজে পায়। অনেকে পটের সঙ্গে নির্বাক যুগের সিনেমার তুলনা করেন।
পটচিত্রের একটি অনন্য বৈশিষ্ট হল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার। স্থানীয় অঞ্চলে পাওয়া যায় এই ধরণের পাতা, সবজি, পাথর, ফুল ইত্যাদি থেকেই রঙের উপাদান সংগ্রহ করে নিচ্ছেন পটুয়ারা। বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হচ্ছে এই প্রাকৃতিক রঙ সংগ্রহ, নিষ্কাশন ও ব্যবহারের জ্ঞান।