এই গল্পটি মহাভারত থেকে গৃহীত। এই পটে, মার্কণ্ড্য মুণী যুধিষ্ঠিরকে তাঁর পূর্বজ সত্যবান ও সাবিত্রীর কাহিনী শোনাচ্ছেন।
যু্ধিষ্ঠির বলেন শুন মার্কণ্ড্য মহামুণি
সাবিত্রী সত্যবান কথা বল শুনি
অশ্যপতি নামে রাজা অবন্তীর পতি
শত্রু নিলো রাজ্য কেড়ে বনে করেন বসতি
একদিন সত্যবান যায় খেলিতে নগরে
শিশুদের সঙ্গে খেলে আনন্দ অন্তরে
হেনকালে সাবিত্রী এলো সেইখানে
সত্যবানে দেখে সাবিত্রী কহেন মনে মনে
ইহারে করিব বিয়ে মনেতে বলিয়া
বরণ করিয়া কন্যা গেলেন ফিরিয়া
মাতাপিতার কাছে কন্যা কয় প্রকাশিয়া
সত্যবানের সঙ্গে মম আজি দাও বিয়া
একথা শুনিয়া রাজা দুঃখ অতি মনে
দুঃখিতজনারে বিয়ে না দিবো তোমারে
সেই দিন বুঝি আজি দৈবের ঘটন
রাজার সৌভাগ্যে এল মুণি তপোধন
সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপ রাজা কন্যা বল কার
রাজা বলেন এই কন্যা জন্মেছে আমার
মুণি বলে কন্যা বিয়ে দিয়েছ কোনজনে?
রাজা বলে নাহি জানি বরে কোনজনে
মুণি বলে ওগো কন্যা বরিয়াছ কারে?
কোন বংশে জন্ম তোমার বরিলে কাহারে?
কন্যা বলে মুণিবর বরিয়াছি যারে
দুম্নসেন রাজার পুত্র নাম সত্যবানে
মুণি বলে ওগো কন্যা জানি আমি তারে
তাহারে ছাড়িয়া বিয়ে কর অন্য বরে
কন্যা বলে মুণিবর বরিয়াছি যারে
অন্য বিবাহ হইয়ে ভ্রষ্টা হব কি কারণে?
মুণি বলে ওগো কন্যা শুন মোর কথা
আমার বাক্য যে না হবে অন্যথা
মরিবেন সত্যবান গো আছেন বিধানে
একটি বৎসর পরমায়ু যে আছে সত্যবানে
এ কথা শুনিয়া রাজা দুঃখ অতি মনে
বিয়ের লগন রাজা বাঁধে শুভদিনে
বিয়ে হল সাবিত্রীর বিধির বিধানে
বিয়ে হয়ে সাবিত্রী গো যায় নিজস্থানে
শ্বশুর শাশুড়ির সেবা সতী তবে করে
এক দুই তিন করে মাস গুনে দিনে দিনে
যেই দিন গো সত্যবানের বছর পুরণ হল
কৃষ্ণ চতুর্দশী সেদিন সাবিত্রী করিল
বনে বনে দুইজন গো করেন ভ্রমণ
নানা বৃক্ষ কৌতুক দেখেন দুইজন
গাছে উঠে সত্যবান গো কাটেন বৃক্ষ ডাল
উপর নীচ হতে আসে যেন মৃত্যুকাল
সত্যবান বলে শুন গো রাজার তনয়া
কিছু না বুঝিতে পারি হল দৈবমায়া
সাবিত্রী বলেন প্রভু জানি পুর্ব কথা
নেমে এসো শীঘ্রগতি ঘুচবে শিরোব্যথা
স্বামীর মরণ হবে সাবিত্রী তা জানে
কেমনে নুইবে মাথা দেখিব নয়নে
এত বলে যমদূত করিল গমন
সাবিত্রীর কাছে যমদূত দিলো দরশন
সতীত্বের ত্বেজে দূত ছুঁইতে না পারে
নিরস্ত হইয়া দূত বলে ধর্মরাজে
সাবিত্রীর কোলে আছে রাজা সত্যবান
ছুঁইতে না পারি আমরা শুন গো রাজন
দূতের মুখে শুনি যম এতেক বার্তা
আপনি চলিল যম গো সত্যবান যেথা
সাবিত্রী বলেন প্রভু তুমি হলে কোন জন
যম বলে হই মা আমি সবার শমন
রাজপুত্র সত্যবান গো হয় তব স্বামী
কাল পূর্ণ হয়ে গেছে লইতে এলাম আমি
এত বলে সাবিত্রী গো রাখে ভূমিতলে
সত্যবান প্রাণ বাহির করিল সত্বরে
স্বামীর মরণ দেখে দুঃখ অতি মনে
কিছু না বলিয়া চলে যমের পিছনে
যম বলে সাবিত্রী মা কোথা যাবে কারে
সত্যবান ছাড়া বর চাও না আমারে
সাবিত্রী বলে প্রভু তুমি হলে কৃপাবান
শ্বশুর পাবে রাজ্য সে গো পিতার পুত্রদান
তাই দিলাম বর সাবিত্রী দিলাম তোরে বর
বর লয়ে সতী তুমি ফিরে যাও ঘর
এত বলি যম রাজা করিলো গমন
সাবিত্রী তার পিছনেতে দিল দর্শন
যম বলে সাবিত্রী মা কোথা যাবে কারে
সত্যবান ছাড়া বর চাও না আমারে
সাবিত্রী বলে প্রভু তুমি হলে কৃপাবান
সত্যবানের ঔরসে দাও শতপূত্র দান
পঞ্চম বৎসরে যেন একেক পুত্র হয়
ওই রকমে আমার যেন একশ পুত্র হয়
তাই দিলাম বর সাবিত্রী দিলাম তোরে বর
বর লয়ে সতী তুমি ফিরে যাও ঘর
তোমার অলঙ্ঘ্য বাণী কে পারে লঙ্ঘিতে
আমার হইবে পুত্র এই বর দিলে
সত্যবানের প্রাণ যে তুমি গেলে গো লইয়া
আমার হইবে পুত্র কেমন করিয়া
ইহার বিচার আগে কর ধর্মরাজ
তোমার সঙ্গেতে মম নাই কোনো কাজ
এত বলে যমরাজা লজ্জিত হইল
সত্যবানে মৃতদেহ ফিরাইয়া দিল
সাবিত্রী সত্যবানেরা দেশে ফিরে গেল
সাবিত্রীর মত সতী কেহ নাহি হল
এইখানেতে সাবিত্রী সত্যবান সমাপ্ত হইল
প্রেমানন্দে একবার সবে হরি হরি বল।